ঝুমন দাশকে জামিন দিতে পারেন এমন বিচারক দেশে নাই?
বাংলাদেশে করোনা ভাইরাস বাড়ছে। সরকার সচেতন ও আন্তরিক। করোনা ঠেকানো যাবে। প্রশ্ন হলো, ‘ধর্মীয় অনুভূতি’ নামক ভাইরাস কি ঠেকানো যাবে? মাস্কে মুখ ঢেকে করোনা ভাইরাস ঠেকানো সম্ভব, ধর্মীয় অনুভূতি ঠেকানো সম্ভব নয়! ধর্মীয় অনুভূতি ভাইরাস করোনা থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী। এ ভাইরাসের সর্বশেষ শিকার লালমনিরহাটের স্কুলের প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার রায়, পুলিশ তাঁকে গ্রেফতার করে জেল হাজতে পাঠিয়েছে। তিনি কোরবানী সম্পর্কে কবি নজরুলের কিছু কথাবার্তার প্রতিধ্বনি করেছিলেন। পক্ষান্তরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন ফেইসবুকে ভগবানকে নিয়ে একটি ব্যাঙ্গাত্মক পোস্টিং দেন্, তিনি গ্রেফতার হননি, বহাল তবিয়তে আছেন। হিন্দুরা থানায় অভিযোগ করেছেন, তিনি ক্ষমা চেয়েছেন। প্রধান শিক্ষক পবিত্র কুমার রায় মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত দিয়েছেন, শেখ হাফিজুর রহমান হিন্দুদের অনুভূতিতে আঘাত দেননি, কারণ ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত’ বাংলাদেশে ইসলাম ছাড়া অন্যদের ‘অনুভূতি’ থাকা বাঞ্ছণীয় নয়?
শাল্লার ঝুমন দাস আপন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেননি, তিনি হেফাজত-ই-ইসলামের অনুভূতিতে আঘাত করেছেন, মামুনুল হকের বিপক্ষে কিছু সত্য কথা লিখেছেন। ফলে শাল্লায় হিন্দুর ঘরবাড়ী পুড়লো, নারীপুরুষ আক্রান্ত হলো মৌলবাদীদের হাতে। ঝুমন দাস গ্রেফতার হলেন। বেশকিছু সন্ত্রাসী গ্রেফতার হলো। ঝুমন দাস এখনো জেলে, সন্ত্রাসীরা সবাই মুক্ত। ঝুমন দাসের স্ত্রী সুইটি দাশ-র কান্না কি আপনারা শুনতে পাচ্ছেন? তাঁর শিশুকন্যার আর্তি? যাঁরা ঝুমন দাস আপনের জামিনের বিরোধিতা করছেন, তাদের ঘরে কি স্ত্রী-কন্যা আছেন? বিচারকরা কেন ঝুমন দাশকে জামিন দিচ্ছেন না তা বোঝা মুশকিল। তাঁরা কি বিব্রত হচ্ছেন? নিরপরাধ ঝুমন দাশকে জামিন দিতে পারেন এমন বিচারক কি দেশে নাই? ঝুমন দাশের স্ত্রী সুইটি দাশ নাকি তাঁর ফেইসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন যে, জামিন না হলে স্বামীর মুক্তির জন্যে তিনি রাস্তায় নামবেন। তিনি নামলেও অন্যরা নামবেন, তেমন ভাবা ঠিক নয়, কারণ যে অদৃশ্য কারণে তিনি জামিন পাচ্ছেন না, একই কারণে অন্যরা মাঠে নামবেন না!
গোপালগঞ্জের জেলার কোটালিপাড়ায় ঈদের দিন পরিকল্পিতভাবে হিন্দু পল্লীতে হামলা হয়েছে। মসজিদের মাইকে গুজব ছড়িয়ে এ হামলা করা হয়। অতীতে মসজিদের মাইকে গুজব ছড়িয়ে হিন্দু পল্লীতে হামলার বহু ঘটনা আছে, যার বিচার হয়নি। প্রশ্ন ওঠে, হিন্দুরা প্রধানমন্ত্রী এলাকায়ও নিরাপদ নয়? মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের নিজ জেলা নোয়াখালীর সুবর্নচরে হিন্দুদের ঘর বাড়িতে হামলা হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের এলাকায় সংখ্যালঘুর ওপর আক্রমন হয়, মিডিয়ায় নিউজ হয়না। ঢাকা ট্রিবিউন ০২রা আগষ্ট জানিয়েছে, সোনালী ব্যাঙ্কের সাতক্ষীরা শাখার এজিএম মনোতোষ সরকারকে ধর্ম-অবমাননার দায়ে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছেন। এদিকে মহানবীকে অবমাননা করায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আশুলিয়া শাখার নিউট্রিশন এন্ড ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী সৌরভ দত্তকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। ভুয়া ইসলাম অবমাননার অভিযোগে পুলিশ হিন্দুদের গ্রেফতার করতে যথেষ্ট উৎসাহী, কিন্তু উল্টো ক্ষেত্রে অজ্ঞাত কারণে পুলিশ চুপসে যায়?
ভারতের সুপ্রিমকোর্ট সদ্য ‘শ্রেয়া সিংহল’ মামলার এক রায়ে আইটি এক্টের ৬৬এ ধারা বাতিল করে বলেছে, সামাজিক মাধ্যমে কোন পোষ্ট দেয়ার জন্যে কাউকে গ্রেফতার করা যাবেনা, মামলাও হবে না। এরপর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার সামাজিক মাধ্যমে বক্তব্যের জন্যে আর কোন মামলা না করতে এবং অতীতে দায়ের করা সকল মামলা প্রত্যাহার করার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশে আদালত কি এমন একটি মহৎ কাজ করতে পারেন? ডিজিটাল সিকিউরিটি এক্টের কোন কোন ধারা অপব্যবহার করে ধর্ম অবমাননার দায়ে অনেক নিরীহ ছেলেমেয়েকে অযথা হয়রানী করা হচ্ছে, বিনা-অপরাধে অনেকে জেল খাটছে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার। ভুয়া অভিযোগে শাল্লার ঝুমন দাস আপনও জেলে পঁচছে। কেন তিনি জেলে বা কি তাঁর অপরাধ এ প্রশ্নের কোন সদুত্তর কি কারো জানা আছে? বাংলাদেশের বিচার বিভাগ তো ‘কাজীর বিচার’ নয়, তাহলে ঝুমন দাস আপন মুক্তি পাচ্ছেনা কেন?