https://www.ebangla.in/29112021-2/

বাংলাদেশে হিন্দু নির্যাতনের প্রতিবাদে হােয়াইট হাউজের সামনে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সমাবেশ,

November 29, 2021 Ebangla Bureau

গত, ১৯শে নভেম্বর, ২০২১, দুপুর ১২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত, পাঁচ ঘন্টা ব্যাপী এক হাজারেরও অধিক যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী-বাংলাদেশী টেলিভিষণ ও প্রিন্ট মিডিয়ার উপস্থিতিতে, হােয়াইট হাউজের সামনে বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে সুপরিকল্পিতভাবে একের পর এক হিন্দু নির্যাতন ও তাঁদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের ওপর আক্রমণের ঘটনার প্রতিবাদে এক বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। প্রধানত: নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক তিরিশটি হিন্দু মন্দির ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে গঠিত ইউনাইটেড হিন্দুজ অফ ইউ. এস. এ. -এর উদ্যোগে আয়ােজিত এই বিক্ষোভে অংশ গ্রহন করতে নিউইয়র্ক শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে মােট তেরটি বাস এবং তিরিশটি ব্যাকিগত গাড়িতে প্রায় ৮০০ বিক্ষোভকারী নারী-পুরুষ ছাড়াও নিউজার্সি, কানেটিকাট, পেনসিলভেনিয়া, মরিল্যান্ড, ভার্জিনিয়া ও ওয়াশিংটন ডি. সি. থেকে অরও দুই শতাধিক প্রবাসী-বাংলাদেশী সংখ্যালঘু মানুষ এসেছিলেন।

 

বিক্ষোভ চলা কালে তাঁদের দুটো ক্ষুদ্র দল ওয়াশিংটনস্থ বাংলাদেশে দূতাবাসে ডেপুটি চীফ অফ মিশন মিজ ফেরদৌসী শাহরিয়ার এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাবিবুর রহমান সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কে সম্বােধন কোরে লিখিত একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন; যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দুই বিভাগের দুজন ডিরেক্টর মি: স্কট আরবাম ও মিজ মরীণ হ্যাগার্ডের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিঙ্কেন কেসম্বােধন কোরে লিখিত একটি স্মারকলিপি হস্তান্তর করেন; এবং, ভারতীয় দূতাবাসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ মােদী কে সম্বােধন কোরে একটি স্মারকলিপি প্রদান করেন। ওই টীমগুলােতে ছিলেন বিক্ষোভ সমাবেশের মূল উদ্যোক্তা উইনাইটেড হিন্দুজ অফ ইউ. এস. এ-র সমন্বয়ক শ্ৰীমান নিত্যানন্দ কিশাের দাস ব্রহ্মচারী, অধ্যাপক নবেন্দু দত্ত, শিতাংশু গুহ, রূপকুমার ভৌমিক, প্রিয়লাল কর্মকার, ভজন সরকার, রামদাস ঘরামী, এন্থনি পিয়াস গােমেজ, প্রদীপ মালাকার, ও জীবক বড়য়া প্রমুখ। সমাবেশে অংশগ্রহণকারী সকল বিক্ষোভকারী, এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে চার-পাতার একটি লিফলেট বিলি করা হয়। তাতে ১৯৪৬ সালের নােয়াখালী ম্যাসাকার থেকে শুরু করে সম্প্রতি সমাপ্ত দুর্গাপূজার অব্যবহিত পর পর্যন্ত দেশে সংঘটিত সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিভৎসতার সচিত্র ইতিহাস তুলে ধরা হয়। দীর্ঘ সময়ব্যাপী অনুষ্ঠিত এই বিক্ষোভ সমাবেশে, বিষ্ণু গােপ ও শ্যামল করের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত আলােচনা পর্বে অনেকেই মাতৃভূমিতে সংখ্যালঘু নির্যাতনের প্রতিবাদে এবং নিন্দা জ্ঞাপন করে বক্তব্য পেশ করেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন হিন্দুজ অফ ইউ. এস, এ-র সমন্বয়ক শ্রীমান নিত্যানন্দ কিশাের দাস ব্রহ্মচারী (নন্দ কিশাের দাস), ইসকন জি.বি.সি.-ইউ. এস. এ.-র অনুত্তম দাস, নবেন্দু দত্ত, শিতাংশু গুহ, ডা: প্রভাত দাস, ডা: সমীর সরকার, প্রিয়লাল কর্মকার, রণজিৎ রায়, রূপকুমার ভৌমিক, ভজন সরকার, রামদাস ঘরামী, স্বামী দেবপ্রিয় নন্দগিরী, গােবিন্দজী বানিয়া, ভবতােষ মিত্র, বিদ্যুৎ সরকার, ডা: নিহার সরকার, প্রদীপ মালাকার, সুশীল সিনহা, শুভ রায়, প্রানেশ হালদার, আশিষ ভৌমিক,সুভাষ সাহা, পিয়াস সেন সুমন, অজিত চন্দ, কুমার বণিক, উমেশ পাল, প্রিয়তােষ দে, এন্থনী গােমেজ, রঞ্জিৎ সাহা, উত্তম সাহা, প্রদীপ ভট্টাচার্য,

 বিপ্লবশীল, প্রদীপ ঘােষ, জীবক বড়ুয়া, কুমার বণিক, শম্পা বণিক, দেবাশিস সাহা, ঝলক রায়, চম্পা সরকার, হিমান রায়, সবিতা দাস, রবীন্দ্র পাল, প্রদীপ সত্রধর, নারায়ণ রায়, নিতাই দেবনাথ, দেবাশিষ সাহা, অরুণ বিকাশ পাল, গােপাল সাহা, রতন কুমার দাস, রাম দেবনাথ, প্রমুখ, এবং নতুন প্রজন্মের রিতু রায়, অন্তরা দাস, নিকিতা, ও প্রিন্সেস। সমাবেশে বক্তারা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন আজ অবধি, অব্যাহত থাকার পেছনে তিনটি কারণ সনাক্ত করেন: প্রথমটি হল, ক্ষমতায় যাওয়া ও থাকার স্বার্থে প্রতিটি রাজনৈতিক দলের স্বাধীনতা বিরােধী ধর্মীয় মৌলবাদী ও উগ্রপন্থী চক্রের সঙ্গে বিভিন্ন রকমের অশুভ, অনৈতিক ছাড় দিয়ে আঁতাত করা; দ্বিতীয়টি, কোন দিনই কোন সংখ্যালঘু নির্যাতকের বিচার না করে সহিংসতার মাধ্যমে অমুসলমানদের দেব-দেবী, উপাসনালয়, বাড়িঘর, দোকানপাট ধ্বংস করে, সহায় সম্পত্তি দখল করে, তাদের নারী ধর্ষণ করে, তাদের বলপূর্বক ধর্মান্তরিত করে, দেশত্যাগে বাধ্য করে, প্রয়ােজনে হত্যা করে দেশটিকে সংখ্যালঘু শূণ্য করতে প্রশ্রয় দেয়া; এবং, তৃতীয়টি, সালাফী-মওদুদী ইসলাম, অর্থাৎ আই, এস, ব্র্যান্ডের ইসলামের বিস্তারে সহায়তা করা। বেশ কয়েকজন বক্তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে এই সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানকল্পে কয়েকটি পদক্ষেপ নিতে আহবান জানান, যার মধ্যে অন্যতম ১৯৭২ সালের সংবিধান পুন:প্রতিষ্ঠা করে দেশে সেকুলার ডেমােক্র্যাসির ভিত্ মজবুত করা; আর, অবিলম্বে একটি বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন করে, জজ সাহাবুদ্দীন কমিশন রিপাের্ট গ্যাজেট আকারে প্রকাশ করে, সেই তালিকা ধরে সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করা। কয়েকজন বক্তা সংখ্যালঘু ধর্ষিতা ও মৃতদের নিয়ে মিথ্যাচার করার কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড: আবদুল মােমেনকে তাঁর পদ থেকে অব্যাহতি দিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি জানান। সকল বক্তাই এই মর্মে দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যাক্ত করেন যে, যতদিন পর্যন্ত বাংলাদেশে সংখ্যালঘু নির্যাতন বন্ধ না হবে এবং প্রতিটি সংখ্যালঘু নির্যাতককে বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না দেয়া হবে ততদিন পর্যন্ত এই আন্দোলন অব্যহত থাকবে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *