২৩ জুন ২০২৩

অতি সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি মিঃ জোসেফ বাইডেন বরাবরে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, আগামী সংসদ নির্বাচন, এবং আভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জরুরী পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে ছয়জন কংগ্রেসম্যান এর লেখা চিঠি নিয়ে দেশে-বিদেশে অবস্থানরত বাংলাদেশী জনগোষ্ঠীর মধ্যে এক ধরণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া পরিলক্ষিত হচ্ছে।

তদুপরি গত ২৪ মে ২০২৩, যুক্তরাষ্ট্রের সেক্রেটারি অফ স্টেট মিঃ অ্যান্টনি জে. ব্লিঙ্কেন কর্তৃক বাংলাদেশে অনুষ্ঠিতব্য গণতান্ত্রিক নির্বাচনের প্রাক্কালে ভিসা নীতির ঘোষণা দেন। চিঠির মর্মবস্তুর পক্ষে বিপক্ষে অনেকের অবস্থান নিয়ে বিবৃতি, পাল্টা বিবৃতি, এবং বিতর্ক বিশেষ করে বাংলাদেশী আমেরিকান ১৯২ জন নাগরিকদের বিবৃতির প্রতি আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে, কারও নিন্দা কিংবা স্তুতি না করে গ্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন এর পক্ষ থেকে আমরা আমাদের অবস্থান সুস্পষ্টভাবে তুলে ধরতে চাই।

নির্মোহভাবে ইতিহাসের সঠিক বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে যে, দ্বি-জাতি তত্ত্বের ভিত্তিতে দেশভাগ এবং ইসলামী মূল্যবোধে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রের জন্মলগ্ন থেকেই বাংলার হিন্দু জনগোষ্ঠীর উপর ক্রমাগত সহিংস আক্রমণ, হামলা, মামলা, অত্যাচার, নির্যাতন, অপহরণ, সম্পত্তি দখল, অগ্নিসংযোগ, এবং নিবর্তনমূলক আইন প্রবর্তন ইত্যাদি মাত্রাভেদে কমবেশি অব্যাহত আছে। কখনও তা গণহত্যার পর্যায়ে উপনিত হয়েছে। ফলে, ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল সময়কালের মধ্যে হিন্দু জনসংখ্যা ৩৩% থেকে ১৯% এ নেমে আসে। ১৯৭১ সালে পাকবাহিনী এবং তাঁদের দোসরদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞে হিন্দুরাই ছিল তাঁদের আক্রমণের প্রধান লক্ষ্য এবং শিকার। আনুমানিক ত্রিশ লক্ষ শহীদের মধ্যে প্রায় ৯০% ছিল হিন্দু ধর্মীয় সংখ্যালঘু শ্রেণীর মানুষ।

জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর সংবিধানের মূল চার নীতির মৌলিক পরিবর্তন সাধন করা হয়। তখন থেকেই রাষ্ট্র এবং সংবিধানকে সাম্প্রদায়িক চরিত্রদানের মাধ্যমে নিষিদ্ধ ঘোষিত স্বাধীনতা বিরোধীদের রাজনীতিতে পুনরায় পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু হয়।

পরবর্তীতে দল নির্বিশেষে অদ্যাবধি ক্ষমতাসীন সব সরকারের আমলেই আদিবাসী, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীসহ হিন্দু, বৌদ্ধ, খৃস্টান ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থার ক্রমাগত অবনতি ঘটেছে। সুংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা এক ভীতিকর পরিবেশের মধ্যে বাস করছে এবং ক্রমাগত তাঁদের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বর্তমানের পরিসংখ্যান অনুযায়ী হিন্দু জনসংখ্যার হার ৭.৯% বলে জানা যায়।

গত ১৭ই মে, ২০২৩, ছয়জন কংগ্রেসম্যানঃ স্কট পেরি, ব্যারি মূর, ওয়ারেন ডেভিস, বব্ গুড, টিম বার্চেট, ও কিথ্ সেল্ফ প্রেসিডেন্ট বাইডেনকে বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের সংস্কৃতি বন্ধ করে সুষ্ঠ নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য সচেষ্ট হতে অনুরোধ করে যে চিঠি লিখেছেন, তাতে নির্যাতন করে দেশের জনসংখ্যায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব ১৯৯৬ সাল থেকে অর্ধেকে পৌঁছে দেওয়ার বিষয়ে আমাদের বক্তব্য এই যে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯৯৬ সালে যখন প্রথম ক্ষমতায় আসেন, তখন সি.আই.এ’র ওয়ার্লড ফ্যাক্ট বুক (২০১৬) এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে শুধু হিন্দু জনগোষ্ঠী ছিল জন্যসংখ্যার ১৬ শতাংশের উপর। কিন্তু, ২০২২ সালে সেটা নেমে এসে দাঁড়িয়েছে ৭.৯৫ শতাংশে।

আর ২০১৬ (ঢাকা ট্রিবিউন, ২২শে নভেম্বর, ২০১৬) সালে প্রফেসার আবুল বারাকাতের গবেষণা-ভিত্তিক ভবিষ্যদ্বানী হচ্ছে, “আগামী তিরিশ বছর বাদে বাংলাদেশে হিন্দুশূন্য হয়ে যাবে,”।

আমরা বলতে চাই যে, ১৯৯৬ সালে থেকে ২০২২ সালের মধ্যে অত্যাচারের ফলে সংখ্যালঘু হ্রাসের ব্যাপারে কংগ্রেসম্যানদের প্রদত্ত হার নির্ভুল। তবে, ১৯৯৬ সাল থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে পাঁচ বছর (২০০১ -২০০৬), বি.এন.পি.- জামাত সরকারও যে ক্ষমতায় ছিল এবং সংখ্যালঘুরা সহিংসতার শিকার হয়েছিল সেটা অনুল্লিখিত থাকার কারণে অনেকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেছে। অনেকের কাছে কংগ্রেসম্যানদের উদ্যোগকে লবিষ্ট নিয়োগের মাধ্যমে ফরমায়েশি চিঠি এবং একপেশে বলে মনে হয়।

ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য কিংবা হারানো ক্ষমতা ফিরে পাওয়ার জন্য রাজনীতির খেলায় কৌশল হিসাবে সকলেই সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিষয়টিকে গুঁটির চাল হিসাবে সব সময় ব্যবহার করে আসছে। আমরা আর সেজন্য কোন রাজনৈতিক দলের অন্ধ সমর্থক হয়ে আমাদেরকে শিখণ্ডী হিসাবে ব্যবহার করতে দিতে চাইনা। কপটতার আশ্রয় নিয়ে অতীত ও বর্তমান ক্ষমতাসীন ও ক্ষমতা বহির্ভূত প্রায় সকল রাজনৈতিক দলই সংখ্যালঘুদের উপর চলমান নির্যাতন বন্ধে “লিপ সার্ভিস” ছাড়া কোন কার্যকর পদক্ষেপ নেয়নি। নির্বাচনের প্রাক্কালে এবং পরবর্তী সময়ে সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনের মাত্রা বেড়ে যায় এবং তাঁরা প্রতিনিয়ত আতংকের মধ্যে থাকে। সংখ্যালঘুদের উপর একতরফা ও অন্যায় আচরণের জন্য আজ পর্যন্ত কেউ শাস্তিভোগ করেছে এমন কোন দৃষ্টান্ত আমাদের কাছে নেই। নির্বাচনী বৈতরণী পাড় হওয়ার প্রাক্কালে সংখ্যালঘুদের ব্যাপারে সুরক্ষা আইন ও কমিশন গঠনসহ দলগুলোর প্রদত্ত গালভরা অঙ্গীকার কেউ পালন করেনি। বরং, আমরা স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, বাংলাদেশে অবস্থানরত ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষা করাই এখন বড় কঠিন হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশকে একটি শতভাগ মৌলবাদী রাষ্ট্রে পরিণত করার সকল প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। সরকার ও বিরোধীদলের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে মৌলবাদী শক্তি প্রতিনিয়ত সংখ্যালঘুদের দেশ থেকে নির্মূল করার জন্য ইসলামের অবমাননার মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে পরিস্থিতিকে ঘোলাটে করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। ইসলামী মৌলবাদী জঙ্গিগোষ্ঠী এবং তাঁদের সমর্থক, দোসররা সারাদেশে ওয়াজের মাধ্যমে প্রকাশ্যে হুংকার দিয়ে একতরফা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও উসকানিমূলক বক্তব্যদান করে চলছে।

এ’রকম একটা জটিল পরিস্থিতি ও যুগসন্ধিক্ষণে, আমরা গ্লোবাল বেঙ্গলী হিন্দু কোয়ালিশন এর পক্ষ থেকে শান্তিপ্রিয় সকল সনাতনী সম্প্রদায় এবং অন্যান্য ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য ব্যক্তিগত বা দলীয় ক্ষুদ্র স্বার্থ ভুলে গিয়ে স্বাধীনতার মূল চেতনা, অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও ধর্মনিরপেক্ষতায় বিশ্বাসী সকল ব্যক্তি ও সংগঠনের বৃহত্তর ঐক্যের উদাত্ত আহ্বান জানাই। আমাদের মূল বক্তব্য, আমাদের পূর্বপুরুষের ভিটিতে আমরা শান্তিতে বসবাস করার অধিকার এবং সুরক্ষা চাই। একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য সকল ধরণের সাম্প্রদায়িক ঘৃণা, বিদ্বেষমূলক বক্তব্য, মুক্তিযুদ্ধ, শহীদ মিনার, জাতীয় স্মৃতিসৌধ, এবং জাতীয় সঙ্গীতের অবমাননাকর কোন বক্তব্য প্রকাশ্যে কিংবা গোপনে প্রচার ও প্রচারণা রাষ্ট্রীয় আইন ও ঘোষণা দ্বারা নিষিদ্ধ করা হোক। আইন ভঙ্গকারীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক।

আমরা সকল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সংস্থা, সরকারসমূহ এবং সাধারণ জনগণের কাছে আমাদের সংকটকালে পাশে দাঁড়ানোর জন্য এবং মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারে সোচ্চার হওয়ার জন্য আকুল আবেদন জানাই।

আমরা রাষ্ট্র কর্তৃক ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের “সংখ্যালঘু” হিসাবে স্বীকৃতিদানের দাবী জানাই। তাঁদের জন্য আলাদা সুরক্ষা আইন [The Religious and Ethnic Minorities Protection Act] তথা একটি শক্তিশালী স্বাধীন সংখ্যালঘু কমিশন এবং সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠন করার দাবী করছি।

শত্রু/পরিত্যক্ত/অর্পিত সম্পত্তি আইন বাতিল এবং দেবোত্তর সম্পত্তি হস্তান্তর বন্ধে এবং দখলকৃত সম্পত্তি পুনরুদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জোর দাবী করছি। দেবোত্তর সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য জাতীয় ভিত্তিক “ওয়াকফ” এর আদলে একটি “দেবত্তোর সম্পত্তি সুরক্ষা ও পরিচালনা বোর্ড” গঠন করার দাবী করছি। শত্রু/পরিত্যাক্ত/অর্পিত সম্পত্তি আইনের মত  বৈষম্যমূলক আইনের ফলে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি ও পরিবার কিংবা উত্তরাধিকারীদের উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দানের জোর দাবী করছি।

পার্বত্য শান্তিচুক্তির দ্রুত ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন চাই। পার্বত্য ভূমি কমিশন আইনের দ্রুত ও যথাযথ বাস্তবায়ন চাই। সমতলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবী করছি।

সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতনকারী, সম্পত্তি জবর দখলকারী ভূমিদস্যু এবং দেশের প্রতি আনুগত্যহীন স্বাধীনতা বিরোধীদের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দিতা করার সুযোগ বাতিল  করা হোক। প্রত্যেক প্রার্থীকে প্রার্থিতার জন্য আবেদনে এই মর্মে একটি ঘোষণাপত্র এবং নির্বাচিত হলে তিনি সংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন মর্মে অঙ্গীকারনামায় স্বাক্ষর নেওয়ার ব্যবস্থা রাখতে হবে।

আমরা সুস্পষ্টভাবে পুনরুল্লেখ করতে চাই যে, আমরা এই ভূমির সন্তান, এবং এই দেশ আমাদের মাতৃভূমি। তাই, আইনের যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে আমাদের সমঅধিকার এবং নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা হোক।

গ্লোবাল বেঙ্গলি হিন্দু কোয়ালিশন এর পক্ষে

অরুন দত্ত, শীতাংশু গুহ, , অনিরুদ্ধ দে, চিত্রা পাল,

অরুণজ্যোতি বড়ুয়া,  তুহিন পাল,  উদয়ন বড়ুয়া, দিলীপ কর্মকার1

 

Secretary Blinkems press release about visa

Six congressmen’s letter to the president of USA are attached here for info.

 

Today, the Announcement of the Visa Policy to Promote Democratic Elections in Bangladesh

[Press Statement by Antony J. Blinken, Secretary of State]

May 24, 2023

I am announcing a new visa policy under section 212 (a)(3)(C) (“3C”) of the Immigration and Nationality Act to support Bangladesh’s goal of holding free, fair, and peaceful national elections. Under this policy, the United States will be able to restrict the issuance of visas for any Bangladeshi individual, believed to be responsible for, or complicit in, undermining the democratic election process in Bangladesh. This includes current and former Bangladeshi officials, members of pro-government and opposition political parties, and members of law enforcement, the judiciary, and security services. The United States notified the Bangladeshi government of this decision on May 3, 2023.

Actions that undermine the democratic election process include vote rigging, voter intimidation, the use of violence to prevent people from exercising their right to freedoms of association and peaceful assembly, and the use of measures designed to prevent political parties, voters, civil society, or the media from disseminating their views.

The holding of free and fair elections is the responsibility of everyone – voters, political parties, the government, the security forces, civil society, and the media. I am announcing this policy to lend our support to all those seeking to advance democracy in Bangladesh

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *